প্রাত্যহিক জীবনে যে কোনো ভালো কাজ শুরু করার আগে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়ে নেওয়া নেওয়া অপরিহার্য এবং এর দ্বারা পূন্য লাভ হয়। সেই সঙ্গে ওই কাজে রহমত, বরকত ও নেয়ামত লাভে সমর্থ হই এবং এ দ্বারা আল্লাহ সব ধরনের নিয়ত ও কাজ পরিপূর্ণ করে দেন।
‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত। এ আয়াতকে কোরআনের মুকুট বলা হয়। এর অর্থ হচ্ছে, পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি অতি দয়ালু ও করুণাময়। বিসমিল্লাহর ফজিলত অপরিসীম। হজরত রাসুলে কারিম (সা.) এ আয়াতকে কোরআনের শ্রেষ্ঠতম আয়াত বলে উল্লেখ করেছেন। এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার অতি দয়া ও করুণাসূচক ‘রাহমান ও রাহিম’ নাম দুটি মানবকুলের জন্য সর্বাগ্রে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ জন্যই বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের এত গুরুত্ব ও তাৎপর্য।
স্মরণ রাখতে হবে, একজন ঈমানদার (বিশ্বাসী) মুসলমান হিসেবে কর্মজীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহপাকের রহমত, রাজি-খুশি অর্জনের নিমিত্তে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পাঠ করা অতি আবশ্যক। আল্লাহর পেয়ারা রাসুল সা. বলেছেন, কোনো ভালো কাজের আগে বিসমিল্লাহ-তাসমিয়া পাঠ না করে নিলে কাজে রহমত-বরকত আশা করা যায় না। সুফল পাওয়া যায় না। হরহামেশা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম জিকির ও আমলে অধিক সওয়াব ছাড়াও অসংখ্য শুভ এবং সৎকাজ দ্রুত সম্পন্ন হয়।
এ বিষয়ে হজরত ইমাম গাজ্জালী (রহ.) বলেছেন, কোনো সৎ, বৈধ, ভালো কাজ সম্পাদনে এক হাজার বার বিসমিল্লাহ পাঠ করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করলে আল্লাহপাক তার মনের মকসুদ পূরণ করে দেবেন। হজরত শায়েখ আবু বকর সিরাজ (রহ.) বলেছেন, যদি কেউ ছয়শ’ পঁচিশবার বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লিখে সঙ্গে রাখে তাকে কেউ ক্ষতি করতে পারবে না বা আপদ-বিপদের আশঙ্কা থাকবে না। তাফসিরে কাবিরে বলা হয়েছে, হজরত রাসুলে পাক (সা.) বলেছেন, কেউ যদি জীবনে চার হাজারবার বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পাঠ করেন, তাহলে রোজ হাশরে তার পতাকা উড্ডীন থাকবে। বিভিন্ন গ্রন্থমতে আরও জানা যায়, ওলি-আউলিয়া, পীর, মোরশেদরা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের আমল করতেন এবং এ আমল দ্বারা অগণিত উপকার পেতেন, যা পরীক্ষিত।
তাফসিরে মারেফুল কোরআনে বিসমিল্লাহ বিষয়ে স্থানে স্থানে নানা উপদেশ রয়েছে। হজরত রাসুলে মকবুল (সা.) বলেছেন, ঘরের দরজা বন্ধ করতে, বাতি নেভাতে, কোনো কিছু খাওয়া, পানি পান করা, ওজু করা, যানবাহনে চড়া, যানবাহন থেকে নামতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলার নির্দেশনা পবিত্র কোরআন-হাদিসে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ছাড়া এ পবিত্র নামটি কারও জন্য প্রযোজ্য নয়।
আল্লাহপাক এমন সত্তার নাম, যে সত্তা (আল্লাহপাক) সব গুণের এক অসাধারণ প্রকাশবাচক। তিনি অদ্বিতীয়। নজিরবিহীন, তুলনাহীন বৈধ ভালো সর্বক্ষেত্রে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলে শুরু করেন। তাই আল্লাহপাক হজরত জিব্রাইলের (আ.) মাধ্যমে যে পবিত্র কোরআনের আয়াতে নির্দেশ দিয়েছেন ‘ইকরা বিসমি রাব্বিকা’- পাঠ করুন আপন পালনকর্তার নামে।
কাজেই প্রত্যেক মানুষের চলমান জীবনের প্রত্যেক কাজের ‘শুভ সূচনায়’ বিসমিল্লাহ বলা অপরিহার্য। রাসুলের এ সুন্নত পালনের মাধ্যমে রাসুলের প্রতি আমাদের ভালবাসা প্রদর্শণ করা উচিত।