জাহেলি সমাজের বিয়ে পদ্ধতি ও বর্তমান বিয়ে



আয়েশা (রা.) বলেন, ‘জাহেলি যুগে বিয়ে ছিল চার প্রকার। প্রথমটি ছিল বর্তমান কালের অনুরূপ। যেমন একে অন্যকে মেয়ের বিয়ের জন্য বার্তা পাঠাত। সে পয়গাম মঞ্জুর হওয়ার পর মোহরানা আদায়ের মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হতো।

দ্বিতীয়টি ছিল নিজের স্বামী থাকা সত্ত্বেও অন্যের কাছ থেকে সন্তান গ্রহণ। বিবাহিত মহিলা রজঃস্রাব থেকে পাকসাফ হওয়ার পর তার স্বামী তাকে বলত, অমুক লোকের কাছে বার্তা পাঠিয়ে তার কাছ থেকে তার লজ্জাস্থান অধিকার করো। অর্থাৎ তার সঙ্গে ব্যভিচার করো। এ সময় স্বামী নিজ স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকত। 

স্ত্রীর কাছে যেত না। যে লোকটিকে দিয়ে ব্যভিচার করানো হচ্ছিল তার দ্বারা নিজ স্ত্রীর গর্ভে সন্তান আসার প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত স্বামী স্ত্রীর কাছে যেত না। গর্ভলক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর স্বামী ইচ্ছা করলে স্ত্রীর কাছে যেত। এমন করার কারণ ছিল যাতে সন্তান সুন্দর, অভিজাত ও পরিপূর্ণ হতে পারে। এ ধরনের বিয়েকে বলা হয় ‘এসতেবদা’ বিবাহ।

তৃতীয়ত, ১০ জন মানুষের চেয়ে কমসংখ্যক মানুষ কোনো এক জায়গায় একজন মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার করত। মহিলা গর্ভবতী হওয়ার পর সে সব পুরুষকে কাছে ডেকে আনত।

 এ সময় কারো অনুপস্থিত থাকার উপায় ছিল না। সবাই উপস্থিত হলে মহিলা বলত, তোমরা যা করেছ, তা তো তোমাদের জানা, এখন আমার গর্ভে এ সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। হে অমুক, এ সন্তান তোমার। তারপর সে মহিলা ইচ্ছামতো যে কারো নাম নিত। যার নাম নেওয়া হতো নবজাত শিশুকে তার সন্তান হিসেবে সবাই মেনে নিত।

চতুর্থত, বহু লোক একত্রিত হয়ে একজন মহিলার কাছে যেত। মহিলা কোনো ইচ্ছুক পুরুষকেই বিমুখ করত না বা ফিরিয়ে দিত না। এরা ছিল পতিতা। এরা নিজেদের ঘরের সামনে একটা পতাকা স্থাপন করে রাখত। এর ফলে ইচ্ছামতো বিনা বাধায় তাদের কাছে যাওয়া যেত। 

এ ধরনের মহিলা গর্ভবতী হলে এবং সন্তান প্রসব করলে যারা তার সঙ্গে মিলিত হয়েছিল তারা সবাই হাজির হতো। তারপর একজন বিশেষজ্ঞ ডাকা হতো। সেই বিশেষজ্ঞ তার অভিমত অনুযায়ী সন্তানটিকে কারো নামে ঘোষণা করত। পরবর্তী সময়ে সেই শিশু ঘোষিত ব্যক্তির সন্তান হিসেবে বড় হতো। সে ব্যক্তি সন্তানটিকে অস্বীকার করতে পারত না।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আগমনের পর আল্লাহপাক জাহেলি সমাজের সব ধরনের বিবাহ প্রথা বাতিল করে দেন এবং বর্তমানে প্রচলিত ইসলামী বিবাহ প্রথা প্রচলন করেন।’ (সহিহ বুখারি, কিতাবুন নিকাহ, খ- ২, পৃ. ৭৬৯)

বিজ্ঞাপন

Seo Services